রাঙামাটি, ১২ অক্টোবর : পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, সরকার সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্বিঘ্নে পালনের জন্য সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার, ১১ অক্টোবর বিকালে রাঙামাটি শহরের মোনঘর রাঙ্গাপানি মিলন বিহার প্রাঙ্গণে আয়োজিত জাতীয় কঠিন চীবরদান উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, এটি পাহাড় ও সমতলের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। এটি শান্তি, সম্প্রীতি ও গণতন্ত্রের বার্তা বয়ে আনবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনাদের দায়িত্বশীল সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সবাইকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, জাতীয় কঠিন চীবর দানোৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা আরও জোরালো হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা জরুরি। এটিকে কোনোভাবে ফাটল ধরানো যাবে না।
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বলেন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য ঢাকার উত্তরায় একটি শশ্মান নির্মাণ করা হয়েছে এবং পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের বৌদ্ধ বিহার ও কল্যাণ ট্রাস্ট ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২১ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সহায়তার অংশ হিসেবে ২ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে।
চট্টগ্রাম পার্বত্য সুপ্রিম সংঘ কাউন্সিলর ও সংঘ প্রধান ভদন্ত শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথেরোর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও প্রাচ্য ভাষা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জিনবোধি মহাথের, অগ্রসার মেমোরিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাসচিব শাসনরত্ন সুমিত্তানন্দ মহাথের সহ বিভিন্ন অঞ্চলের ভিক্ষু-সংঘ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, ট্রাস্টি প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মংহ্লা চিং রাখাইন, ট্রাস্টি অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুব্রত বরণ বড়ুয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, জাতীয় কঠিন চীবর দান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রনজ্যোতি চাকমা, সংগীত শিল্পী রনজিত দেওয়ানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
দুইদিনব্যাপী উৎসবের শুরুতে আকাশ প্রদীপ উত্তোলন, চীবর বুনন, প্রদীপ প্রজ্বলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্থান থেকে তিন শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া কক্সবাজার, টেকনাফ, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামের সমতল-পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংঘিক সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
দিনব্যাপী ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই ঐতিহাসিক আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan